ওটসের স্বাস্থ্য উপকারিতা(Health Benefits of Oats )
ওটস কি ? What is Oat?
ওটস হল এক প্রকার এর শস্য , যা খুবই স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য। বিশ্বের সব থেকে পুষ্টিকর শস্য দানার মধ্যে ওটস হল অন্যতম, যা আমাদের শরীরের ভারসাম্য এবং ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। সবাই মনে করে যে এটি শুধু মাত্র ওজন কমাতেই সাহায্য করে কিন্তু এর আরো অনেক উপকারিতা আছে।
ওটস হল এমন একটা শস্য , যাতে ভিটামিন , মিনারেলস , উচ্চমাত্রায় ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা আমাদের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি।
ওটসের পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য ( Nutrition facts of Oats) -
কাঁচা ওটসের ১০০গ্রাম এর পুষ্টির তথ্য হল -
ক্যালোরি - ৩৮৬
প্রোটিন - ১২.৬ গ্রাম
কার্ব - ৬৬.৮গ্রাম
কোলেস্টেরোল - ০ গ্রাম
চিনি - ০ গ্রাম
জল - ৮%
ফাইবার - ১০.৬গ্রাম
ফ্যাট - ৫.৩গ্রাম
এছাড়াও ওটসে থাকে ভিটামিন বি 1, আইরন , ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম , জিঙ্ক ইত্যাদি পুষ্টিকর উপাদান।
ওটসের উপকারিতা (Benefits of Oats ):-
আজকাল মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ সচেতন হয়ে গেছেন , তাই ওজন কমানোর জন্য যখন সবাই নানারকম পন্থা অবলম্বন করেন , খাওয়ার জিনিসে পরিবর্তন আনেন , নানারকম ডায়েট ফুড নিজের রোজকার মেনুতে রাখেন। আর আজকালতো মেনু তে ওটস থাকাটা বাঞ্চনীয়। এমনকি ডাক্তাররাও আপনার ডায়েটে ওটস রাখার পরামর্শ দেন।
ওটস তবে শুধু রোগা হওয়ার কাজেই আসে না এর আলাদা অনেক রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।
"ওটস হল একমাত্র খাদ্য যাতে আভেনানথ্রামাইড নামে একপ্রকার এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে , যা খুবই দুর্লব এবং এটি হৃদরোগ মোকাবিলায় সাহায্য করে। রক্তে শর্করার (Blood Sugar)পরিমাণ কমানো বা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনার মতো গুণও ওটসের রয়েছে।"
সকালের ব্রেকফাস্টে আজকাল এটি অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুব সহজেই এটি খাওয়া হয়ে যায়। দুধ বা গরম জলের মধ্যে ওটস দিয়ে পরিজের মতো অনেকেই সকালের প্রাতঃরাশ সারেন। স্বাদের দিক থেকে তেমন সুস্বাদু না হলেও এটি পুষ্টিকর হওয়ার জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এখন এমন অনেক রেসিপি আছে যা দিয়ে ওটসকেও অনেক সুস্বাদু বানানো যায়। বিভিন্ন ওটস কুকিস , চিল্লা বানাতেও এখন ওটসের ব্যবহার হয়।
এবার আমরা দেখে নেব ওটসের কি কি স্বাস্থ্যকর গুণ আছে :-
১. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে (Oats helps to reduce High Blood Pressure) -
অনেকদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাহলে অবশ্যই আপনার রোজকার খাবারে ওটস রাখা প্রয়োজন।
আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশান অনুযায়ী , প্রচুর পরিমাণে গোটা দানাজাতীয় শস্য (Whole Grains) আপনার ডায়েটে রাখলে সেটি রক্তচাপ হ্রাসে অ্যান্টি - হাইপারটেনসিভ ওষুধ খাওয়ার মতোই কার্যকর।
২. হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে ( Oats helps to protect our heart) -
আপনার হার্টকে ভালো রাখতে চান বা আপনার কোনো হার্টের সমস্যা রয়েছে তাহলে অবশ্যই রোজকার খাবারে ওটস রাখুন চিকিৎসকেরাও সেই পরামর্শ দিচ্ছেন।
ওটসের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল আভেনানথ্রামাইডস নামে একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা একমাত্র ওটসে থাকে। এই আভেনানথ্রামাইডগুলি নাইট্রিক অক্সাইড এর মাত্রা বাড়িয়ে রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
এর মধ্যে ভিটামিন সি এবং অ্যাবুনডেন্ট ফাইবার এর মাত্রা বেশি থাকে যা আমাদের হার্টকে রক্ষা করে।
৩. ডায়াবেটিস রোগীর পক্ষে উপকারী ( Oats are very beneficial for Diabetes Patients) -
ডায়াবেটিস এখন লোকের ঘরে ঘরে। আগে তো বলা হত যে এটি হেরিডিটি কিন্তু এখন অনেক কারণ থেকেই ডায়াবেটিস এর সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। ডায়াবেটিস কে কন্ট্রোল করার জন্য বিভিন্ন ধরণের খাওয়ার থাকে রোগীদের খাদ্য তালিকায়। ওটস হল এমনই একটি খাদ্য যা ডায়াবেটিস রোগীদের তাদের খাদ্যে রাখা উচিত।
ওটসের মধ্যে গ্লাইসেমিকের পরিমাণ কম থাকে যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই শস্যদানাটির মধ্যে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকে। এটির মধ্যে বিটা- গ্লুকানস নামে ফাইবার থাকে যা ডায়াবেটিস এর পক্ষে উপকারী।
৪. ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে (Oats enhance your Immunity Power) -
এই পেনডেমিক এর বাজারে আমাদের শরীরে সবথেকে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হল আমাদের ইমিউনিটি পাওয়ার সঠিক থাকা । আমাদের শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার বেশি থাকলে আমাদের অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
ওটসের মধ্যে বেটা - গ্লুকান থাকে যা আমাদের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে সাহায্য করে। এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ওটস আমাদের খাবারে প্রতিদিন রাখলে তা আমাদের ইমিউনিটি পাওয়ার তো বাড়ায়ই তাছাড়াও ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস , ছত্রাক ও পরজীবীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ায়। তাই ছোট থেকে বয়স্ক সবার খাদ্যতালিকাতেই ওটস রাখা আবশ্যক।
৫. কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে ( Oats reduces our body Cholesterol ) -
বিশ্বে হার্টের রোগ হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে আর এর সব থেকে বড় কারণ হল আমাদের বডিতে বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরলের পরিমাণ। বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণ হয়েছে যে ওটসে থাকা বেটা-গ্লুটিন শরীরে কোলেস্টেরলের টোটাল মাত্রা এবং ল ডি ল (LDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
নেদারল্যান্ড এবং ব্রিটেনের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তির খাবারে যদি অতিরিক্ত ১০গ্রাম উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার থাকে তাহলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০ শতাংশ হ্রাস পায়।
৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে ( Oats help us to reduce our Body Fat) -
এটা আমরা প্রত্যেকেই জানি যে ওটস আমাদের ডায়েটে রাখলে তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারাই রোগা হওয়ার জন্য ডায়েট শুরু করেন তারা প্রত্যেকেই নিজের খাবারে এটি অবশ্যই যুক্ত করেন।
যখনি আমরা কোনো ডায়েটিশিয়ান বা চিকিৎসকের কাছে যায় তারা পরামর্শ দেন যেন সকালের ব্রেকফাস্ট তা খুব ভালো ভাবে আমরা করি এবং এমন কিছু খাবার খাই যা আমাদের অনেকক্ষন ধরে পেট ভর্তি রাখে তাই সকালবেলার ব্র্যাকফাস্টে গরম দুধ বা জলের সাথে ওটসের পরিজ রাখলে তা শুধুমাত্র সুস্বাদুই লাগে না বরঞ্চ পুষ্টিকরও হয় যা অনেক্ষন আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে।
আর আমাদের ওয়েট কমানোর জন্য আমাদের সব সময় পেট ভর্তি খাবার খাওয়া উচিত যা আমাদের শরীরের উপযুক্ত প্রোটিন , ভিটামিন , মিনারেলস , ফাইবারের চাদিহাও পূরণ করবে।
আর ওটসে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার আমাদের পেট অনেক্ষন ভরিয়ে রাখে যার ফলে আমাদের খিদে কম পায়।
৭. কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে ( Oats helps us to dell with Constipation problem) -
যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলেও আপনার খাবারের ওটস রাখা অত্যন্ত আবশ্যক। এটাও ওটসে থাকা ফাইবারেরই কাজ। ওটসে থাকা ফাইবার আমাদের গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল ট্রাকটিকে সঠিক ভাবে চালিয়ে রাখতে সাহায্য করে যা কনস্টিপেশন এর অসুবিধাকে দূর করে।
৮. আমাদের ত্বকের যত্নেও ওটস কার্যকর (Finely ground oats help us with our Skin Care ) -
আমাদের শরীরের এত উপকারে জখন ওটস কাজে লাগে তাহলে ভাবুন তা স্কিনেরও কত উপকার করে পারে। বিভিন্ন ধরেনর স্কিনের জিনিসে আজকাল বড় বড় কোম্পানিরা ওটস গুঁড়ো ব্যবহার করেন।
আপনার ত্বকে যদি কোনো জ্বালা বা চুলকানি হয় তাহলে গুঁড়ো ওটস লাগালে তাতে অনেক উপকার পাওয়া যায় , এর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আছে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে ওটস ত্বকের রোগ এক্জিমার (Eczema) ক্ষেত্রে অনেক উপকারি। এই শস্যের মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান পপরিপোষক পদার্থ থাকে যা আমাদের ত্বককে সুন্দর এবং মসৃণ করে তোলে।
Note : তবে মনে রাখতে হবে যে ত্বকে ওটসের কার্যকারিতা তখনই সফল হবে যখন আপনি সেটি আপনার ত্বকে সরাসরি লাগাবেন, এর সাথে ওটস খাওয়ার কোনো যোগাযোগ নেই।
৯. শিশুদের জন্য উপকারী ( Oats are also very good for Children ) -
ওটসের মধ্যে সব রকম গুণ থাকায় শিশুর খাদ্যেও ডাক্তাররা ওটস রাখতে বলছেন, তবে সেটা তাদের মতো করেই সুস্বাদু বানিয়ে দিতে হবে তাহলে তারা সেগুলো খেতে পারবে। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে , হজম শক্তি বাড়াতে , তাদের দেহে যাতে সঠিক পুষ্টি হয় তার জন্য ওটস থাকা ভালো। আবার কিছু বিশেষজ্ঞের মতে ছোট বাচ্চাদের যাদের আস্থামা থাকে তাদের ক্ষেত্রেও এটি উপযুক্ত।
তবে এটাও ঠিক যে অনেক ছোট বাচ্চারই হয়ত ওটসে এলার্জি থাকে তাতে অনেক সময় তাদের সর্দি , বমি , পেতে ব্যথা , চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তাই সব কিছু খেয়াল রেখেই আপনার ডায়েটে এটি যুক্ত করা উচিত।
অতিরিক্ত ওটস সেবন করলে অনেক বেশি ঘুম পাওয়া , পেশীর ব্যথা , ক্লান্তি , ছানির সমস্যা, মাইগ্রেন , হারের ব্যথার মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঠিক ভাবে ওটস রান্না না করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। ওটসে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে তার বেসি সেবনের ফলেও শরীর খারাপ হতে পারে।
আমরা জানি যে কোনো কিছুই অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে বা ব্যবহার করলে আমাদের শরীরের ক্ষতি হতে পারে , তেমনি ওটস ও অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তার কিছু বাজে প্রভাবও আমাদের শরীরে পড়তে পারে তাই সব সময় ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিয়েই সেটি আপনার ডায়েটে যুক্ত করবেন ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন