RANGEELO RAJASTHAN || বর্ণময় রাজস্থান ||


রাজস্থান : সংস্কৃতি এবং রঙের শহর  Rajasthan Culture 

ভারত ... বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং রঙের দেশ, যেই রং গুলির মাধ্যমে আমরা আমাদের আবেগ প্রকাশ করি। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে বিভিন্ন ধরণের মানুষ বসবাস করে , তার বিভিন্ন ধরণের ভাষা , বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতি।  ভারতে এমন একটি রাজ্য রয়েছে যা বিভিন্ন রঙের নামে পরিচিত।  আর সেটা হল রাজস্থান।  বিভিন্ন রাজারা বিভিন্ন সময়কালে এইখানে রাজত্ব করেছেন ।  আর সেই শহর এখনো অব্দি ধরে রেখেছে তাদের নিজেদের রাজ্যের সেই সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য।  রাজাদের এই শহর সত্যিই এক রাজকীয় গুপ্তধনের মত যার  অলিতে গলিতে আজও ছরিয়ে রয়েছে পুরনো সেই ঐতিহাসিক সম্পদ যা  আজও মানুষকে তার দিকে আকর্ষণ করে।  এইখানে ঘুরতে যাওয়া মানে সেইসব রহস্যের সমাধান করার মত।  

Rajasthan
আমার ক্যামেরায় বন্দি রাজস্থানের বিভিন্ন স্থান   Different places of Rajasthan captured by me 

আর রাজস্থান বললেই আমাদের বাঙালিদের কাছে যেটা সবার প্রথম মাথায় আসে , সেটা হল - সোনার কেল্লা।  যা আমাদের নস্টালজিক করে তোলে। কেউ যদি রাজস্থানের সোনার কেল্লা (জয়সালমীর দুর্গ ) না ও গিয়ে থাকে তাহলেও মনে হয় হয়তো আমাদের কত  চেনা।   

সংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগতভাবে সমৃদ্ধ এই রাজ্যে রয়েছে  দুর্গ , বালিয়াড়ি , প্রাসাদ, গ্রাম, শহর যা এই দেশের আসল মর্ম উপস্থাপন করে।   রাজস্থান এমন একটা রাজ্য যা বিভিন্ন ধরণের শিল্প, স্থাপত্য , তাদের লোকসঙ্গীত এবং লোকনৃত্যকে অনেকাংশে প্রাধান্য দেয়।  এইখানকার অনন্য স্থাপত্য শিল্পে রয়েছে রাজপুতানা এবং মুঘল বংশের ছোয়া।  

অনেক এরকম শিল্প , কলা রয়েছে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং এমনকি আজও তারা সেই ঐতিহাসিক সমৃদ্ধকে নিজেদের মধ্যে ধরে রেখেছে। ভারত এমন একটা জায়গা যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটে , তার মধ্যে নিজেদের পুরোনো  সংস্কৃতিকে ধরে রাখা সব রাজ্যের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু রাজস্থান আজও তার পুরোনো লোকগীতি এবং লোকসংগীতকে সমানভাবে প্রাধান্য দিয়ে চলেছে। তাদের সেই পুরোনো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উপভোগ করতে আজও তাই দেশের এবং বিদেশের  বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আজও মানুষ সেখানে ছুটে যায়।  

রাজস্থানের স্থাপত্যশিল্প       Architecture of Rajasthan   

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে , রাজস্থান হল রাজপুতানাদের বাড়ি , যারা প্রায় ১০০০ বছর ধরে এইখানে রাজত্ব করেছে যারা দাবি করে যে তাদের জন্ম হয়েছে সূর্য, চন্দ্র এবং অগ্নি থেকে। আর আজকাল রাজস্থানি মানুষই তাদের সেই সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে চলেছে। রাজস্থানি মানুষ তাদের ইতিহাস, তাদের কালচার এর জন্য বিশ্ব জুড়ে বিখ্যাত।   রাজস্থানের বিভিন্ন উৎসব , মেলাতে যদি আপনি গিয়ে থাকেন তাহলে  আপনি  সেখানকার  শিল্প, সংস্কৃতি , ঐতিহ্য , ইতিহাস এবং সেখানকার মানুষের পোষাক , বসবাসের  সম্পর্কে জানার একটা সুযোগ করে দেবে।  এই রাজ্যের সংস্কৃতি প্রভাবিত হয় ঐখানকার মানুষের পোষাক, খাদ্য , বিভিন্ন লোকগীতি, লোকনৃত্যের মাধ্যমে। আজও সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের দুর্গ, প্রাসাদ, হাভেলি যা সময়কালে পরিবর্তন হয়ে পর্যটনের স্থানে পরিবর্তন হয়েছে। 



এইখানকার প্রতিটি সংস্কৃতিই এখানকার মানুষের মতোই বৈচিত্রময়। এইখানকার ট্রাডিশনাল জামাকাপড় বল বা জাঙ্ক জুয়েলারি বল, বা তাদের ঘুমার নাচ সব ই মানুষের মন কাড়ে।  তাই তো এর নাম -- RANGEELO RAJASTHAN বা বর্ণময় রাজস্থান।  আর আপনি যদি এই মরুভূমির রাজ্যে  কখনো যান তাহলে তার ইতিহাস আর সংস্কৃতি উপভোগ করতে একদম ভুলবেন না।  

রাজস্থানী মহিলা 

কেসরিয়া বালাম আয়োনি পাধারও মারহে দেশ ( Kesariya balam aavo ni padharo marhe desh )- সব থেকে বিখ্যাত রাজস্থানি গান  যার মানে হল Welcome to our country বা আমাদের দেশে স্বাগতম।   এই গান দিয়ে রাজস্থানের মানুষ অথিতি আপ্পায়ন করে। এই গানের পিছনেও এক ইতিহাস জড়িত আছে। আপনি যদি এই রাজ্যে যান তাহলে আনাচে কানাচে এই গান অনেক শুনতে পারবেন।   
এই রঙিন শহরের মতোই এইখানকার মহিলারাও রঙিন জামাকাপড় পড়তে ভালোবাসেন। তারা ঘাগড়া চলি পড়েন সাথে অক্সিডাইস্ড জুয়েলারি পড়েন যা চানিয়া চোলি (Chaniya choli) নাম জানা যায় বা পাথর আর জরি বসানো শাড়ি।  আর পুরুষেদের ধুতি তার সাথে পাগড়ি। 
রাজস্থানি নৃত্য ঘুমার্ ও  কালবেলিয়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।  এছাড়াও আরো অনেক লোকো সংস্কৃতি রাজাস্থানের গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে আছে। তারা নাচের এবং গানের মাধ্যমে গল্প তৈরী করতে পারে। 
রাজস্থানী পাগড়ি, লোকগীতি 


বাংলায় যা আমরা পুতুল নাচ বলে জানি , তাকে রাজস্থানে বলে কাঠপুতলি নাচ।  আমাদের বাংলার পুতুল নাচ সেইখান থেকেই তো এসেছে। বলা হয় যে প্রায় ১৫০০ বছরের পুরোনো এই লোকো সংস্কৃতি।আমাদের বাংলাতেতো আজকাল দেখাই যায়না পুতুল নাচ , কোনো গ্রামে গঞ্জে গেলে হয়ত তও চোখে পরে, কিন্তু রাজস্থানে গেলে আজও বিভিন্ন জায়গায় এটি দেখতে পাওয়া যায়।   

কাঠপুতলি নাচ বা পুতুল নাচ 



রাজস্থানের সংস্কৃতির সাথে সাথে এইখানকার  খাদ্য ডাল - বাটি - চুড়মা , পেঁয়াজ কচুরি , ঘেভার এইগুলিও প্রসিদ্ধ। এই রাজ্যের এক একটা জায়গা যেমন এক একটা রংকে চিত্রিত করে তেমনি এইখানকার এক একটা খাবার এক একটা জায়গাকে চিত্রিত করে।  

যারা ঘুরতে ভালোবাসেন তাদের জন্য একদম উপযুক্ত জায়গা হল রাজস্থান, যেখানে ঘোড়ার সাথে সাথে আপনি এখানকার ঐতিহ্য , সংস্কৃতি, শিল্প , সাহিত্য , ইতিহাস সব সম্পর্কেই জানতে পারবেন। এত বৈচিত্রময় জায়গাকে আপনি কখনোই মিস করতে পারেন না।  






মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ