Healthy Besan Ladoo Recipe in Bengali - স্বাস্থ্যকর বেসন লাড্ডু প্রণালী

 স্বাস্থ্যকর বেসন লাড্ডু প্রণালী - Healthy Besan Ladoo Recipe


লাড্ডু আমাদের ভারতীয়দের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি মিষ্টি।  বিভিন্ন ধরণের লাড্ডু আমরা বাড়িতে বানিয়ে থাকি বা মিষ্টির দোকানে খেয়ে থাকি।  যেমন বুন্দি লাড্ডু , বেসন লাড্ডু , তিলের লাড্ডু বা নারকেলের লাড্ডু।  তিল বা নারকেলের লাড্ডুকে আমরা আবার নাড়ুও বলে থাকি।  
এর মধ্যে বেসনের লাড্ডুকে বলা যায় চিরাচরিত অতি জনপ্রিয় ভারতীয় মিষ্টি।  যা বেসন , ঘি , চিনি , বাদাম দিয়ে তৈরী হয়। 

কিন্তু আপনি হয়তো বলবেন যে বেসন লাড্ডু তো মিষ্টি , কত চিনি থাকে তার মধ্যে , তা স্বাস্থ্যকর কি করে হয়।  হ্যাঁ , ঠিক বেসন লাড্ডু একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়।  কিন্তু যদি আমরা স্বাস্থ্যকর জিনিস দিয়ে লাড্ডু বানাই তাহলে তো স্বাস্থ্যকর হতেই হয়।  যেমন ধরো আমরা যদি চিনির বদলে গুড় দি, বা খেজুর দি তাহলে তো সেটা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হয়। তাতে যদি আমরা ১ কাপ ঘি না দিয়ে অল্প ঘি দিয়ে করে তাহলেও অনেক স্বাস্থ্যকর হয়।  

 

স্বাস্থ্যকর বেসন লাড্ডু 

আর এখন আপনি বাইরে দোকান থেকে না কিনে বাড়িতেই স্বাস্থ্যকর উপায়ে বেসন লাড্ডু বানাতে পারেন। আর এতে সময়ও খুব একটা বেশি লাগে না।  ডায়াবেটিক মানুষ বা স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মাঝে মধ্যে মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করলেই এটি বাড়িতে বানিয়ে খেতে পারবেন।  


বেসন লাড্ডুতে ব্যবহৃত সামগ্রীর স্বাস্থ্য গুণাবলী -

আজকে আমরা শিখবো কি করে আপনি বাড়িতেই বানাতে পারবেন স্বাস্থ্যকর বেসন লাড্ডু। মাত্র ৬ টা উপকরণ দিয়েই এই লাড্ডু তৈরী হয়ে যাবে। কিন্তু তার আগে  আমরা যে উপকরণ গুলো ব্যবহার করবো তার স্বাস্থ্যকর গুণাবলী গুলো জেনে নেওয়া দরকার।  

বেসন :

বেসনের মধ্যে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে। আটার থেকেও বেশি প্রোটিন থাকে এতে।  বেসনে যা ফ্যাট থাকে তার বেশিরভাগটাই হল ভালো ফ্যাট , যা আমাদের খাবারে রাখা উচিত। এই স্বাস্থ্যকর অসম্পৃক্ত ফ্যাট (Healthy Unsaturated Fat) আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ও মিনারেলসও থাকে। আর এটি রোজকার আটার থেকেও অনেক বেশিক্ষন আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে।  বেসন ডায়াবেটিসের জন্যও খুব উপকারী।  এটি জটিল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং সঠিক পরিমাণে ফাইবার যুক্ত হওয়ায় ডায়াবেটিসের জন্য খুব জরুরি।  বেসন আবার কনস্টিপেশনের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। 

ঘি : 

ঘিয়ের মধ্যে ফ্যাট থাকে , কিন্তু তেল বা বাটার থেকে এর মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম থাকে।  কোনো কিছুই অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে সেটা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। এক্ষেত্রেও সেটা একই। 
ঘিয়ের মধ্যে শুধুমাত্র ফ্যাটই থাকে কোনো কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন , চিনি এসব থাকে না।  এর মধ্যেও ভালো ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। তাই অন্য এটি অন্য ফ্যাটের মতো হার্টের ক্ষতি করে না।  
এটি আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে ভালো করে। এতে বুট্ৰিক অ্যাসিড (Butyric Acid) থাকে যা আমাদের বিভিন্ন রোগের সাথে লড়ার ক্ষমতা বাড়ায়।  ঘি হজম শক্তিও ঠিক করতে সাহায্য করে।  ঘিয়ের মধ্যে থাকে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই যা আমাদের লিভারের সমস্যা , হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন কে। তেল বা বাটারের থেকে কম ফ্যাট থাকায় বাড়িতে বানানো ঘি একটা স্বাস্থ্যকর বিকল্প।  

ফ্লেক্স বীজ (Flax Seed) বা তিসি বীজ : 



আমাদের রোজকার চেনা জানা জিনিসের মধ্যে এমন অনেক জিনিস আছে যার কথা সবাই খুব একটা জানে না বা তার মধ্যে যে কত গুন্ লুকিয়ে আছে তাও হয়ত সবার জানা থাকে না। তিসি বীজ বা Flax seed হল এমনই একটা জিনিস যার গুণাবলী প্রচুর। এতে থাকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট , ফাইবার , ওমেগা ৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম , ক্যালশিয়াম এমনকি ভিটামিন বি ১ , বি ৬।  এটি নিয়মিত খেলে রোগা হতেও সাহায্য করে।  

গুড় : 

চিনি আমাদের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। অত্যধিক মাত্রায় চিনি আমাদের দেহের ফ্যাট বাড়ায়, বিভিন্ন রজার সঞ্চার করে। চিনিকে কেউ কেউ তাই বিষের সাথেও তুলনা করে।  চিনির থেকে গুড় অনেকাংশে বেশি স্বাস্থ্যকর। চিনি ,গুড় দুটোই আখের রস থেকে তৈরী হয় কিন্তু চিনিকে নানারকম প্রক্রিয়াজাত উপায়ে কারখানায় তৈরী করা হয় তার ফলে এর মধ্যে থাকা ভালো গুন্ গুলো সব চলে যায়।  কিন্তু গুড় সেইসব প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায় না তার ফলে তার মধ্যে ভালো গুন্ গুলো থেকে যায়।
গুড়ের মধ্যে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে যা আমাদের মধ্যে আলাদা এক শক্তি জোগায়।  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।  

আমন্ড বাদাম : 

আমন্ড বাদাম যে স্বাস্থ্যকর সেটা আমরা সবাই জানি।  রোজকার জীবনেও আমন্ড বাদাম আমাদের খাওয়া উচিত।  বিশেষজ্ঞদের মতে রোজ ৪-৫ টা আমন্ড বাদাম জলে ভিজিয়ে খেলে আমাদের হার্টের সমস্যা দূর হয় এমনকি আমাদের ত্বকও অনেক সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়।  আমন্ড বাদামে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের অ্যান্টি এজিং প্রপার্টি থাকে যা আমাদের শরীরের বয়সের চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন ই ও থাকে।   

স্বাস্থ্যকর বেসন লাড্ডু বানানোর প্রক্রিয়া - 

সময় - ২০ মিনিট 

উপকরণ :

  • বেসন 
  • ঘি 
  • তিসি বীজ ( Flax Seed)
  • গুড় 
  • এলাচ গুঁড়ো 
  • আমন্ড বাদাম 

প্রণালী :

১.  ৪ টেবিল চামচ তিসি বীজ বা flax seed নিয়ে মিক্সিতে আগে ভালো ভাবে গুঁড়ো করে নিন।  

২. ৯-১০ টা আমন্ড বাদাম নিয়েও মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন। 

৩. প্রথমে একটি পাত্রে ঘি(৩-৪ টেবিল চামচ ) গরম করতে দিন।  

৪. ঘি গরম হয়ে গেলে তাতে বেসন দিয়ে দিন। এখানে আমি ১৫০ গ্রাম বেসন ব্যবহার করেছি।  

৫. বেসন দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নাড়তে থাকুন। নাহলে বেসনের দলা পাকিয়ে যাবে এবং লাড্ডু তৈরীই করতে পারবেন না।  তলায় লেগেও  যেতে পারে এবং বেসনটা পুড়ে যেতে পারে।  ৭-৮ মিনিট নাড়ার পর দেখবেন যে বেসনটা অনেক নরম এবং পাতলা হয়ে এসেছে।  


৬. আরো ২ মিনিট বাদে  বেসনটা আরো নরম হয়ে এলে এবার তাতে গুঁড়ো করা flax seed বা তিসি বীজটা দিয়ে দিন।  সাথে এলাচ গুঁড়ো। 

৭. তিসি বীজের গুঁড়ো তা ভালো করে মিশিয়ে নেওয়ার পরে ওতে গুড় দিয়ে দিন।  আপনি যতটা মিষ্টি পছন্দ করেন সেই অনুযায়ী দেবেন।  গুড় দেওয়ার পর অনবরত ভালো ভাবে মিশ্রণটা নাড়তে থাকবেন নাহলে পুড়ে যেতে পারে।  



৮. গুরটা ভালোভাবে মিশে গেলে ওতে গুঁড়ো করা আমন্ড বাদামগুলো দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে দেবেন।  

৯. এরপর মিশ্রণটা কিছুক্ষন ঠান্ডা করতে দিন।  তবে বেশিক্ষন ফেলে রাখবেন না তাহলে ওটা একদম শক্ত ও ঝুরঝুরে হয়ে যাবে এবং লাড্ডু পাকাতে অসুবিধা হবে।  

১০. কিছুটা ঠান্ডা হলে এরপর ছোট ছোট লাড্ডুর মতো বল পাকিয়ে ফেলুন।  তাহলেই তৈরী হয়ে গেল আপনার স্বাস্থ্যকর , পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু বেসন লাড্ডু।  


লাড্ডু গুলো আপনি অনেকদিন রেখে খেতে পারবেন।  মাঝে মাঝেই হয়তো মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে আপনার কিন্তু শরীরের সচেতনতার কথা ভেবে আটকে যান। এই রেসিপিটা আপনার মিষ্টির ক্রেভিংসকে পূরণ করবে।  

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ